ওয়ানডে বিশ্বকাপ
জনপ্রিয়

দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে সেমিফাইনালের সমীকরণ কঠিন হলো ইংল্যান্ডের

ওয়াংখেড়েতে জিততে হলে ইংল্যান্ডকে রেকর্ড গড়তে হতো। রেকর্ড গড়েছেন কিন্তু সেটা জয়ের নয় পরাজয়ের। রানের হিসাবে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২২৯ রানের ব্যবধানের হার। আগের বিব্রতকর রেকর্ডটি ছিল ২২১ রানের অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও এটি সর্বোচ্চ ব্যবধানের হার। এর আগে ছিল ১২২ রানের।

 

দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া ৪০০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধসে পড়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং অর্ডার। মাত্র ৬৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। দলীয় ১৮ রানে জনি বেয়ারস্টো আউট হন। ব্যক্তিগত ১০ রানে ইংলিশ ব্যাটারকে রাসি ফন ডার ডুসেনের ক্যাচ বানান লুঙ্গি এনগিডি। ৪ রান পর আরেকটি ধাক্কা খায় ইংল্যান্ড। এবার তিনে নামা জো রুটকে হারিয়ে বসে তারা। রুটকে আউট করেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং ইনিংসের সময় অপরাজিত ৭৫ রানের ইনিংস খেলা মার্কো ইয়ানসেন। রুটকে সতীর্থ ডেভিড মিলারের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন বাঁহাতি পেসার।

 

২৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ডের যখন বড় জুটি প্রয়োজন ঠিক তখনই আবার দলকে বিপদে ফেলে ড্রেসিংরুমে ফেরেন বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৪০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা ডেভিড মালান। ৬ রানে আউট হন বাঁহাতি ওপেনার। অন্যদিকে চোটের কারণে আগের তিন ম্যাচে না খেলা বেন স্টোকসও দলকে হতাশ করেছেন। বিশ্বকাপে ফেরার ম্যাচে মাত্র ৫ রান করতে পেরেছেন সর্বশেষ বিশ্বকাপের ম্যাচসেরা। কাগিসো রাবাদার বলে তাঁকেই ক্যাচ দিয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরেন তিনি।

 

হ্যারি ব্রুক ও জস বাটলার শুরুটা ভালো করলেও দ্রুত ফিরেছেন সতীর্থদের দেখানো পথে। দুজনই আউট হয়েছেন জেরাল্ড কোতেয়জির বলে। ব্রুকের ১৭ রানের বিপরীতে ১৫ রান করতে পারেন অধিনায়ক বাটলার। তাঁদের অনুসরণ করে ফিরেছেন স্পিনার আদিল রশিদও। তিনিও কোয়েতজির বলে ১০ রানে আউট হয়েছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ১২ রান করে ফিরে যান ডেভিড উইলিও। বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ব্যবধানের পরাজয় যখন চোখ রাঙাচ্ছিল ঠিক তখনই এমন বিব্রতকর রেকর্ড থেকে ইংল্যান্ডকে উদ্ধার করলেন গাস অ্যাটকিনসন ও মার্ক উড। দুজনে মিলে নবম উইকেটে ৭০ রানের জুটি গড়েন। সেটিও আবার মাত্র ৩২ বলে। দুজনের দলের সর্বোচ্চ রান স্কোরারও। ১৭ বলে সর্বোচ্চ ৪৩ রানে অপরাজিত থাকেন উড। আর ৩৫ রানে আউট হন বিশ্বকাপে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা অ্যাটকিনসন। চোটের কারণে ব্যাটিংয়ে নামেননি রিস টপলি। ৩৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা বোলার কোয়েতজি।

 

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। হেনরিখ ক্লাসেনের সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটিতে নির্ধারিত ওভার শেষে ৭ উইকেটে ৩৯৯ রান করে। এতে প্রথমে ব্যাটিং করে সর্বশেষ ৬ ম্যাচের প্রতিটিতেই ৩০০-র বেশি রান করল তারা। আর বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচের ৩টিতেই ৩০০ ছাড়াল।

 

ওয়াংখেড়েতে শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল না দক্ষিণ আফ্রিকার। দলীয় ও ব্যক্তিগত ৪ রান করার সময় আউট হন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা কুইন্টন ডি কক। সতীর্থের ফেরার ধাক্কা অবশ্য দ্রুত সামলিয়ে নিয়েছেন রাসি ফন ডার ডুসেন ও রিজা হেনড্রিকস। দ্বিতীয় উইকেটে ১২১ রানের জুটি গড়েন তাঁরা। ৬০ রানে ডুসেন আউট হওয়ার পরও রানের চাকা সচল থাকে দক্ষিণ আফ্রিকার। চারে নেমে এইডেন মার্করামও ইংল্যান্ডের বোলাদের ওপর চড়াও হন। তিনি চড়াও হলেও বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারেননি হেনড্রিকস। ৮৫ রানে ফেরেন তিনি। ১৫ রানের আক্ষেপে হেনড্রিকস পুড়লেও সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ক্লাসেন। মার্কো ইয়ানসেনের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে তাঁর ১৫১ রানের জুটিতেই রানের পাহাড় গড়ে প্রোটিয়ারা। ৬১ বলে ঝোড়ো সেঞ্চুরির পর ১০৯ রানে আউট হন ক্লাসেন। ৬৭ বলের দুর্দান্ত ইনিংসটি সাজিয়েছিলেন ১২ চার ও ৪ ছক্কায়।

 

অন্যদিকে সেঞ্চুরি না পেলেও ক্লাসেনের চেয়েও বিধ্বংসী ছিলেন অপরাজিত ইয়ানসেন। ১৭৮.৫৭ স্ট্রাইকরেটে ৪২ বলে ৭৫ রান করেছেন তিনি। ৩ চারের বিপরীতে মেরেছেন ৬ ছক্কা। শেষ ১০ ওভারে আজ ১৪৩ রান তুলেছে প্রোটিয়ারা। শেষ দিকে এমন বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের কারণেই নির্ধারিত ওভার শেষে ৭ উইকেটে ৩৯৯ রানের পাহাড় গড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৮৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের সেরা বোলার টপলি।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button