বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড বিশ্লেষণ পর্ব-১০: শেখ মেহেদি হাসান
![](https://i0.wp.com/bn.tigercric.com/wp-content/uploads/2021/10/1-1-scaled.jpg?resize=780%2C470&ssl=1)
বাংলাদেশ দলে যে কয়েকজন নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটার রয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন অলরাউন্ডার শেখ মেহেদি হাসান। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট বেশ আগেই পার করে আসা মেহেদি হাসান টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এখন দলের নিয়মিত সদস্য। ‘বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ স্কোয়াড বিশ্লেষণ’ এর এই পর্বে থাকছে শেখ মেহেদি হাসানের আদ্যোপান্ত।
ঘরোয়া ক্রিকেটে শেখ মেহেদি হাসান সাধারণত ব্যাট করে থাকেন উপরের সারিতে। টপ অর্ডার কিংবা মিডল অর্ডারে নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা মেহেদি জাতীয় দলে এসে অবশ্য ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করতে হয়েছে। টপ অর্ডার কিংবা মিডল অর্ডারে জায়গা না থাকায় তাকে দেখা যায় লোয়ার অর্ডারে। তবে মাঝেমধ্যেই টপ অর্ডারে তাকে নিয়ে পরীক্ষা চালায় টিম ম্যানেজমেন্ট। গত জিম্বাবুয়ে সিরিজে কিংবা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে তাকে টপ অর্ডারে খেলানো হলেও সেখানে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি তিনি।
ব্যাটিং বিভাগে মেহেদি হসানের শক্তির জায়গা কব্জির মোচড়ে বলকে দ্রুত গতিতে সীমানা ছাড়া করা। জায়গায় দাঁড়িয়েই ব্যাট চালানোতে বিশেষ পারদর্শী এই ক্রিকেটার সফলও হয়েছেন বেশ। ম্যাচে শেষের দিকে দ্রুত গতিতে রান তোলার জন্য হয়তো কিছুটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারেন এই অলরাউন্ডার।
ব্যাট হাতে এখনও শতভাগ পরিপক্ক না হওয়া শেখ মেহেদির দুর্বলতা রয়েছে শট সিলেকশনে। কোন বলকে কিভাবে খেলবেন সেই ভাবনাটা যেন আগেই ঠিক করে থাকেন তিনি। ফলে যারা অভিজ্ঞ বোলাররা সহজেই হয়তো কাবু করতে পারবেন তাকে। বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে বিশ্বের সেরা বোলারদের মোকাবেলা করতে গেলে তাই হয়তো ভিন্ন ভাবনা ভাবতে হবে তাকে।
স্পোর্টিং উইকেটে মেহেদি দলের জন্য বেশ কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেন ব্যাট হাতে। মিডল অর্ডার কোনো কারনে ভেঙে পড়লে হয়তো শেষের দিকে কিছু রান যোগ করলে দলের জন্য সেটা কার্যকরই হতে পারে।
এখন পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে মেহেদি হসান ১৮টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন। যেখানে তার রান ১২০। ১২ গড়ে ব্যাটিং করা মেহেদির স্ট্রাইকরেট ৯৬.৭৭। নিচের সারির ব্যাটসম্যান হিসেবে হয়তো আরও কিছুটা ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দিতে হতে পারে তাকে। কেননা এমন গড় আর স্ট্রাইকরেট ব্যাট হাতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য নেহাতই কম বটে!
মেহেদি হাসানের ব্যাটিংয়ের চেয়ে বেশি কার্যকর বোলিং। ব্যাট হাতে নিয়মিত না দেখা গেলেও বল হাতে প্রতি ম্যাচেই খেলেছেন তিনি। ডানহাতি এই অফ স্পিনারের বোলিংয়ের ভেরিয়েশন চোখে পড়ার মতই। বাংলাদেশ দলে এখন পর্যন্ত আসা অন্যান্য স্পিনার থেকে তিনি আলাদা গতির কারনে।
স্পিন বোলিংয়ে সাধারণত গড়পড়তা যে গতি দেখা যায় এরচেয়ে কিছুটা বেশি গতি দিয়ে থাকেন এই স্পিনার। ফলে স্লো উইকেট কিংবা স্পোর্টিং উইকেট দুই জায়গাতেই সফলতা বয়ে এনেছেন তিনি।
শেখ মেহেদির বোলিংয়ের ভেরিয়েশনের অন্যতম আরেকটি পন্থা হল হ্যান্ড ডাউন স্পিন। যে ধরনের বোলিং দেখা যায় ভারতের রবীচন্দ্রন অশ্বিন কিংবা কেদার যাদবের কাছ থেকে। ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করার সাথে উইকেট তুলে নিতেও সহযোগিতা করে এই বোলিং অ্যাকশনটি।
জাতীয় দলে ওয়ানডে ফরম্যাটে এখনও নিয়মিত না হতে পারলেও টি-টোয়েন্টিতে ১৮ ম্যাচের মধ্যে ১৮ ইনিংসেই বল করেছেন তিনি। এই স্পিনার এই ১৮ ইনিংসে দখলে নিয়েছেন ১৫ উইকেট। ২৭.৭৩ গড়ে বল করা মেহেদির ইকোনোমিটা ৭.১৭। সেরা বোলিং ফিগার ১২ রানে ২ উইকেট।
বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে এসে শেখ মেহেদি হাসান একাদশে থাকবেন কিনা সেটা অবশ্য প্রশ্ন সাপেক্ষ। কেননা যদি স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হয়ে থাকে তাহলে হয়তো একজন বেশি পেসার দেখা যেতে পারে একাদশে। এক্ষেত্রে হয়তো মেহেদি হাসানকে সব ম্যাচে সুযোগ দিবে না টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে সুযোগ পেলে যে নিজেকে প্রমান করেই টিকে থাকবেন তিনি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।