ক্রিকেট বিশ্বকাপ

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড বিশ্লেষণ পর্ব-১১: মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন

বিশ্বকাপ স্কোয়াড বিশ্লেষণ পর্ব-১১: মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন

বাংলাদেশ দলে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের অভাব চলে আসছিলো দীর্ঘ সময় ধরে। কিছু সময়ের জন্য জিয়াউর রহমান পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে দলে আসলেও কালের আবর্তনে হারিয়ে গেছেন তিনিও। সর্বশেষ পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে টাইগার স্কোয়াডে থিতু হয়েছেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। ‘বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড’ বিশ্লেষণ এর এই পর্বে থাকছে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের আদ্যোপান্ত।

বিশ্বকাপে পেস বোলার হিসেবে বাংলাদেশ দলে রয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ এবং মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। সাইফুদ্দিনের বোলিং টেকনিক খুঁটিয়ে দেখতে গেলে দেখা যায়, গতি কিছুটা কম থাকলেও সুইং, ইয়র্কার কিংবা কাটার সব ধরনের বলই করতে পারেন ডানহাতি এই পেসার। প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করতে সাথে তিনি করতে পারেন নাকল বলও। সাইফুদ্দিনের বোলিংয়ের এই ভেরিয়েশনটাই তার মূল অস্ত্র। যা কাজে লাগিয়ে ব্যাটসম্যানরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিজের ফায়দা তুলে নিতে পারেন তিনি।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে পাওয়ার প্লের প্রথম ছয় ওভারের মধ্যে সাইফুদ্দিন বরাবরই দুর্দান্ত। শুরুতেই ব্রেক থ্রু এনে দিয়ে ছন্দপতন ঘটিয়ে খেই হারাতে বাধ্য করেন ব্যাটসম্যানদের। বিশ্বকাপের একাদশে থাকলে পাওয়ার প্লেতে হয়তো বল হাতে দেখা যেতে পারে তাকে।

প্রথমদিকে দিকে দলকে ভালো শুরু এনে দিতে পারলেও স্লগ ওভারে সাইফুদ্দিন মোটেও সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। প্রতিনিয়ত শেষের দিকে রান বিলানোর প্রবনতা তার মধ্যে উপস্থিত। ফলে স্লগ ওভারে টিম ম্যানজম্যান্টকে বিকল্প ভাবনা ভাবতে হতে পারে।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের জার্সিতে সাইফুদ্দিন খেলেছেন ২৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। যেখানে সব ইনিংসেই বল হাতে দেখা গিয়েছে সাইফুদ্দিনকে। এই ২৫ ম্যাচে তার দখলে রয়েছে ২৬টি উইকেট। একজন নিয়মিত বোলার হিসেবে হয়তো উইকেটের দিক থেকে খুব বেশি এগিয়ে নেই সাইফুদ্দিন। তবে এখনও সুযোগ রয়েছে আরও ভালো করার।

এই ফরম্যাটে সাইফুদ্দিনের ইকোনোমি ৮.৪৮। বোলার হিসেবে কিছুটা বেশি খরুচেই বলা যেতে পারে তাকে। সেই সাথে তার বোলিং গড়টাও ২৭.৭৩। নিয়মিত বোলার হিসেবে গড়ের দিক থেকেও বেশ পিছিয়ে রয়েছেন তিনি। তবে সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনা করলে অংকটা কথা বলে সাইফুদ্দিনের পক্ষেই।

গত অস্ট্রেলিয়া সিরিজের এক ম্যাচে সুযোগ পেয়েই দখলে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সুযোগ পেয়ে ৪ ম্যাচে নিয়েছেন ৫ উইকেট। সবকিছু মিলিয়ে বল হাতে টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতিদান কতটুকু দিতে পারেন সাইফুদ্দিন সেটা প্রমান হবে মাঠেই।

বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও দলের হয়ে সাপোর্ট দিতে পারেন সাইফুদ্দিন। মিডল অর্ডারে তার জায়গা না হলেও কখনও ৮ আবার কখনও এরও নিচে ব্যাট হাতে নামতে হয় সাইফুদ্দিনকে। ফলে খুব বেশি বল মোকাবেলা করার সুযোগটা কম তার জন্য।

এখন পর্যন্ত দেশের জার্সিতে সাইফুদ্দিন ২৫ ম্যাচের মধ্যে ব্যাট হাতে নামার সুযোগ পেয়েছেন ১৪ ইনিংসে। তার নামের পাশে রয়েছে ১৭২ রান। ১৭.২০ গড়ে এখন পর্যন্ত ব্যাট হাতে খেলছেন সাইফুদ্দিন। বাংলাদেশ দলে খেলা বর্তমান অনেক টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের গড়ের কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে সাইফুদ্দিনের গড়। ফলে তার ব্যাটিং গড় নিয়েও প্রশ্ন তোলার সুযোগ কম।

সাইফুদ্দিনের ব্যাটিং বিভাগে দুর্বলতা রয়েছে কেবল স্ট্রাইকরেটে। অর্থাৎ শেষের দিকে ব্যাট হাতে নেমে যেখানে ক্যামিও ইনিংস খেলার কথা সেখানে তার ব্যাটিং গতি যেন কিছুটা মন্থর। ১০৬.৮৩ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করা সাইফুদ্দিন যদি বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে ব্যাট হাতে কিছুটা সাপোর্ট দিতে পারেন শেষের দিকে তাহলে হয়তো দলের জন্য তা বেশ কার্যকরী হতে আরে।

বিশ্বকাপে সাইফুদ্দিনের একাদশে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে প্রবল। যদি অন্তত স্পোর্টিং উইকেট হয়ে থাকে তাহলে স্বভাবতই বাড়তি পেসার হিসেবে দলে যোগ দিতে পারেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button