ক্রিকেট ফ্যাক্টক্রিকেট বিশ্বকাপ

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড বিশ্লেষণ পর্ব-৮: নুরুল হাসান সোহান

বিশ্বকাপ স্কোয়াড বিশ্লেষণ পর্ব-৮: নুরুল হাসান সোহান

২০১৬ সালে জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহানের। এরপর অবশ্য খুব বেশি সময় ধরে দলে থিতু হতে পারেননি তিনি। মূলত মুশফিকুর রহিমের মত অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান দলে থাকার কারনেই দল থেকে বাদ পড়তে হয়েছিল তাকে। সময়ের সাথে হাল ছেড়ে না দিয়ে আবারও নিজেকে প্রমান করেন গত ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে। চলতি বছরে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে নুরুল হাসান সোহান ব্যাট হাতে করেছিলেন ৩৮৯ রান। এরপর আবারও জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর সুযোগ আসে সোহানের সামনে।

গত জিম্বাবুয়ে সিরিজের মাঝপথে মুশফিকের চলে আসা কিংবা লিটন দাসের ইনজুরিতে পড়ার পর দলের উইকেটরক্ষক হিসেবে জায়গা পাকা হয়ে যায় নুরুল হাসান সোহানের। ওই সিরিজে ব্যাট হাতে তিন ম্যাচ থেকে দুই ম্যাচেই খেলে আসেন ফিনিশারের ভূমিকায়।

নুরুল হাসান সোহানের বিগ শট খেলার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই খুব একটা। ঘরোয়া ক্রিকেট হোক কিংবা আন্তর্জাতিক দুই দিক থেকেই সোহানের বড় শট খেলার প্রমনটা চোখে পড়ার মত। স্পোর্টিং উইকেটে অবশ্য সোহান এই সুবিধা বেশি কাজে লাগাতে পারেন। তবে স্লো উইকেটে এসেও যে দেখেশুনে ব্যাট চালাতে পারেন সুদর্শন এই ক্রিকেটার।
ঘরোয়া ক্রিকেটে সোহান সাধারণত ব্যাটিং করে থাকেন টপ অর্ডারে। তবে জাতীয় দলে আপাতত টপ অর্ডারে সোহানের জায়গা নেই। তাই তাকে খেলানো হতে পারে ছয় কিংবা সাত নম্বরে। এই পজিশনে ব্যাটিং করলে স্বাভাবিকভাবেই মাঝখানের ওভারগুলোতে সোহানের খেলার সুযোগ কম থাকবে। স্লগ ওভারে তাই তাকে নিতে হবে ফিনিশারের ভূমিকা। অথবা টপ অর্ডার ভেঙে পড়লে দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে ধৈর্য্যশীল ইনিংস।

তিন কাঠির পেছনে সোহান বরাবরের মতই প্রশংসিত। দলের অধিনায়ককে সহযোগিতার কাজটা যেখানে ষোলকলা পূর্ন করে থাকেন ব্যাটসম্যানের পিছনে থেকে। গ্লাভস হাতে পেছনে দাঁড়িয়ে দলের বোলার কিংবা ফিল্ডিংয়ে থাকা সতীর্থদের উজ্জীবিত করার কাজ করতে বেশ লক্ষণীয় সোহানের মধ্যে দেখা যায়। সর্বশেষ যার প্রমান মিলেছে জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সিরিজে এসে।

গ্লাভস হাতে সোহান জাতীয় দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তিন কাঠির পেছনে দাঁড়িয়েছেন ২২ ম্যাচে। যেখানে তার ডিসমিসালের সংখ্যা ১৬টি। এই ১৬ ডিসমিসালের মধ্যে সোহান ক্যাচ নিয়েছেন ৯টি এবং সাতবার ক্ষিপ্র গতিতে স্ট্যাম্পিং করতে সক্ষম হয়েছেন।

সোহানের দুর্বলতা অবশ্য রয়েছে এক জায়গাতে। বোলার বল করার আগেই তা কিভাবে মোকাবেলা করবেন তা যেন ইঙ্গিত দেন বোলারদের। অর্থাৎ ফ্রন্টফুট নাকি ব্যাক ফুটে যাবেন কিংবা ডিফেন্স করবেন নাকি বড় শট খেলবেন তা বুঝতে যেন খুব একটা কঠিন হয় না বোলারদের পক্ষ থেকে। এর কারনে অবশ্য খেসারত দিতে হতে পারে সোহানকে। বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে এসে বিশ্বের সেরা সব বোলারদের সামনে এমন অবস্থা থাকলে হয়তো কিছুটা বেকায়দায় পড়তে হতে পারে ব্যাট হাতে।

সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনা করলে সোহানের ব্যাটিং কিছুটা গড়পড়তা। সর্বশেষ ১০ ইনিংসে সোহানের ব্যাট থেকে এসেছে ৯৫ রান। জাতীয় দলের জার্সিতে ২২ ম্যাচের ১৯ ইনিংসে সোহান করেছেন ১৭৩ রান। ১১৬.৮৯ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করা সোহানের গড় ১৪.৪১। সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি হলো অপরাজিত ৩০ রানের। এর পেছনে অবশ্য বড় কারণ রয়েছে শেষের দিকে ব্যাটিং করা। ব্যাটিংয়ের চেয়ে সোহানের উইকেটকিপিং যে দলে বেশি প্রভাব রাখবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button