blog

বাংলাদেশে অনলাইনে জুয়া খেলার প্রবণতা বাড়ছে

ইন্টারনেটের সুবাদে বিভিন্ন ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খেলা নিয়ে অনলাইনে বাজি ধরা বা জুয়ায় জড়ানোর রেওয়াজ বিশ্বের অনেক জাতির মধ্যেই রয়েছে। পাশ্ববর্তী বেশকিছু রাষ্ট্রেও বেশ কয়েক বছর যাবত ‘ফ্যান্টাসি গেমিং’, ‘বুদ্ধির খেলা’, ‘দক্ষতার খেলা’ প্রভৃতি অযুহাত ব্যবহার করে অনায়াসেই চলছে এধরনের ব্যবসা। এধরনের বেশকিছু সাইট তাদের অস্তিত্বের প্রমাণ বিভিন্ন দেশের জাতীয় দলকে স্পন্সর কিংবা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইভেন্টে জোরেসোরে প্রচারণার মাধ্যমে জানান দিয়ে চলেছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের আইন ও প্রচলিত বিশ্বাসে জুয়াকে বরাবরই দেখা হয়েছে ঘৃণিত এক অপরাধ হিসেবে। তবে জুয়া নিয়ে দেশে যে আইনটি প্রচলিত রয়েছে সেটি ব্রিটিশ আমলের একটি বিধান যা ১৮৬৭ সালে প্রণীত হয় এবং এখানে শাস্তি হিসেবে স্রেফ ৫০ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছিলো যা আজকের দিনে তেমনকিছুই নয়। প্রায় ১৫৭ বছর পুরোনো এই আইন যেহেতু লোকমনে ন্যূনতম ভয়ের সৃষ্টি করছে না, তাই প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে জুয়ার ভয়াল থাবা যার পেছনে হালআমলে সবচেয়ে বেশি দায়ী করা যায় হরেক রকমের এসব জুয়ার সাইটগুলোকে।

বিগত কয়েকবছরে নানাভাবে এসব সাইটগুলো এদেশে তাদের ব্যবসাকে সম্প্রসারণের অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও বিদেশের নানা ইভেন্টকে কেন্দ্র করে দেশি ক্রিকেটারদের অনুমতি ব্যতীত তাদের ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন ওয়েবসাইট (যেমন – ডিকশনারির ওয়েবসাইট, বিভিন্ন খেলাধুলা বিষয়ক নিউজপোর্টাল) এবং ইউটিউবে বিজ্ঞাপন প্রচার করে চলেছে। আবার অনেক ফিশিং লিঙ্কও অজান্তেই প্রতিনিয়ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের এসকল সাইটে নিয়ে যাচ্ছে। শুরুর দিকে দেশি বিভিন্ন অনলাইন নিউজপোর্টালকে লোভনীয় অঙ্কের স্পন্সরশিপ প্রদানের মাধ্যমে সাইটগুলো নিজেদের নামের প্রচার শুরু করলেও ক্রমে কিছু জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলও বিজ্ঞাপন বিরতিতে এসব সাইটের ভাসা-ভাসা বাংলায় নির্মিত বিজ্ঞাপন দেখাতে শুরু করে। এসবের বাহিরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এসব সাইটের লোকাল এজেন্ট বা স্থানীয় প্রতিনিধির অস্তিত্বের কথাও কারো অজানা নয়। নানা প্রলোভন দেখিয়ে এসব প্রতিনিধি ক্রমশ বাড়িয়ে তুলছে এসব সাইটের ব্যবহারকারীর সংখ্যা।

এসব সাইটে একজন ব্যক্তির প্রথমটা শুরু হয় সামান্যকিছু টাকা বিনিয়োগের মধ্যদিয়ে। মূলত যেকোনো জুয়ার আসরে প্রকৃত লাভবান বা বিজয়ী হয় জুয়ার হাউজ বা আয়োজনকারীরা। বিদেশি বিভিন্ন সিরিজ ও চলচিত্রে ব্যাপারগুলো বেশ গুছিয়ে ইতোমধ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে। আর এসকল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর ওয়েবসাইটগুলোর ডিজাইন এমনভাবেই করা হয়েছে যাতে প্রথম প্রথম অল্প অল্প বিনিয়োগে কিছু লাভও করা যায়। তবে যখন সাইটগুলো ব্যবহারকারীর আগ্রহের ব্যাপারটি আঁচ করতে পারে, তখনই মূলত শুরু হয় আসল খেলা। ব্যবহারকারী এবারে হারতে শুরু করেন যদিও ব্যাপারটি এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ ও সাজানো হয় যে মনে হবে পরেরবার ব্যক্তি ঠিকই কিছু না কিছু জিতবেন। অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে, এসব সাইটের মালিকদের সাজানো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট শেষ মুহূর্তে সঠিক তথ্য প্রদান করে বাজি জিতে নেয়। তবে এই আসক্তি যখন ক্রমশ বাড়তে থাকে, তখন শুরু হয় ব্যক্তির অধঃপতন। একটা সময় বেশিরভাগ ব্যক্তিই যখন বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারেন, তখন তারা হয় মূল্যবান সঞ্চয় হারিয়ে বসেন নতুবা ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়েন।

বাংলাদেশের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ অবশ্য গত বছর আগের আইনে একটি সংশোধন প্রস্তাব করে। সেখানে জুয়া ধরায় দোষী সাবস্ত্য ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড কিংবা অনধিক ৫ লক্ষ টাকার অর্থদণ্ডের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এবছর পুলিশের পক্ষ থেকেও জুয়ার আইনে পরিবর্তন চাওয়া হয়েছে। তবে সঠিক মনিটরিং এবং সাইটগুলোর এক্সেস বন্ধ করে দেওয়া না হলে হয়তো পরিস্থিতি আরো চরম হয়ে উঠবে, ইতোমধ্যে তরুণদের একটি অংশ জুয়ার জড়িয়ে যাচ্ছে এবং সামাজিক মাধ্যমে নানাভাবে বিষয়টিকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে আমাদের নজরে এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button