ফিচার

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রিয়াদের ১৬ বছর

“উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই,
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই চরণ দুটোর সাথে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের বহুলাংশে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সেই ২০০৭ সালের ২৫ শে জুলাই কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলংকার বিপক্ষে অভিষেকেই জানান দিয়েছিলেন তিনি। বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই ম্যাচে সেদিন বাংলাদেশ ৩৯ রানে পরাজিত হয়েছিলো এটা যেমন সত্যি ঠিক তেমনি সেদিন যে বাংলার ক্রিকেটে এক নবদুতের আগমন ঘটেছিলো সেটাও ঠিক ততটাই সত্যি।

আজকের দিনে যারা ক্রিকেট খেলা দেখে তারা জানে না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কে? সেদিনকার সেই বোলিং অল-রাউন্ডার কিভাবে আজকের দিনের বাংলাদেশ দলের মিডেল অর্ডারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেন তা জানেনই বা ক’জন। অভিষেকে বল হাতে দুই উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে করেন ৩৬ রান। সেদিন হয়তো মাহমুদউল্লাহ শ্রীলংকার বিপক্ষে বাংলাদেশ দলকে জেতাতে পারেননি। তবে ১১ বছর পর নিদাহাস ট্রফিতে অঘোষিত সেমিফাইনালে শ্রীলংকার বিপক্ষে যে মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেছিলেন রিয়াদ সেই ইনিংস দিয়েই বোধহয় আঁচ করা যায় দলের প্রয়োজনে কতটা ভয়ংকর হতে পারেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ম্যাচ শেষে মাহমুদউল্লাহ যখন উল্লসিত, ঠিক তখনই কোনো এক আলোকচিত্রশিল্পী তুললেন এক চমৎকার আইকনিক ছবি। যেখানে রিয়াদের পিছনে বিজ্ঞাপনী বোর্ডে লেখা ছিলো “Hero”। সত্যি-ই তো বাংলার ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এক অবিসংবাদিত হিরো।

যার কল্যাণে বাংলাদেশ দল প্রথম এবং এখন অবধি শেষবারের মতন বিদেশের মাটিতে দুই বা ততোধিক ম্যাচের টেস্ট সিরিজে জয় পেয়েছিলো, ২০১১ ও ‘১৫ র বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড বধ করেছিলো, ‘১৭ র চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিতে খেলেছিলো, ‘১৮ র এশিয়া কাপে আফগানদের হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিলো আর নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলংকা বধ তো রয়েছেই। এছাড়াও গেল বছর ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের ২য় ম্যাচে মেহেদী মিরাজ সবটুকু আলো কেড়ে নিলেও ম্যাচ জয়ে রিয়াদের ভূমিকা ছিল অসামান্য।

রিয়াদরা খেলতে জানেন, রিয়াদরা দেশকে ভালোবাসতে জানেন, জানেন কি করে বিপদের চরম মুহূর্তে দলের হাল ধরতে হয়। আর এ কারণেই রিয়াদরা ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালি জাতির মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিবেন সারাজীবনের জন্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ১৬ বছর পূর্তিতে তার প্রতি টাইগারক্রিক পরিবারের পক্ষ থেকে রইলো অজস্র সম্মান আর ভালোবাসা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button